অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হলো একটি সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান কাজ হলো ডিভাইসের মেমোরি ম্যানেজমেন্ট, প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, ফাইল ম্যানেজমেন্ট, এবং হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্ট। অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, এবং এগুলো কাজের ধরন, ব্যবহারের প্রয়োজন, এবং প্রযুক্তি অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে।

অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ:

১. সিঙ্গেল ইউজার অপারেটিং সিস্টেম (Single-User Operating System):

  • এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম একবারে কেবল একটি ব্যবহারকারীকে কাজ করার অনুমতি দেয়।
  • সাধারণত ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: MS-DOS, Windows 98, Windows XP।

২. মাল্টি-ইউজার অপারেটিং সিস্টেম (Multi-User Operating System):

  • এই অপারেটিং সিস্টেম একাধিক ব্যবহারকারীকে একসঙ্গে একটি কম্পিউটার বা সার্ভার ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।
  • এটি সাধারণত সার্ভার বা বড় সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে সংযুক্ত থাকতে পারে।
  • উদাহরণ: UNIX, Linux, Windows Server।

৩. রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real-Time Operating System - RTOS):

  • এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য রেসপন্স প্রদান করতে সক্ষম, যা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করে।
  • RTOS সাধারণত এমবেডেড সিস্টেম, অটোমেশন সিস্টেম, এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: VxWorks, FreeRTOS, QNX।

৪. সিঙ্গেল টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Single-Tasking Operating System):

  • এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম একবারে কেবল একটি প্রোগ্রাম চালাতে সক্ষম।
  • সাধারণত পুরোনো কম্পিউটার সিস্টেমে বা এমবেডেড সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: MS-DOS।

৫. মাল্টি-টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Multi-Tasking Operating System):

  • এই অপারেটিং সিস্টেম একাধিক প্রোগ্রাম বা কাজ একসঙ্গে সম্পন্ন করতে সক্ষম।
  • মাল্টি-টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম দুটি ভাগে বিভক্ত:
    • প্রি-এমটিভ মাল্টি-টাস্কিং: যেখানে অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে সময় ভাগ করে দেয়। উদাহরণ: Windows, Linux।
    • কো-অপারেটিভ মাল্টি-টাস্কিং: যেখানে প্রোগ্রামগুলো নিজেরাই নিজেদের জন্য সময় নির্ধারণ করে। উদাহরণ: Windows 3.x, Mac OS (পুরোনো সংস্করণ)।

৬. ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System):

  • এই অপারেটিং সিস্টেম একাধিক কম্পিউটার বা ডিভাইসের মধ্যে কাজ সমন্বিত করে, যা একটি একক সিস্টেমের মতো কাজ করে।
  • ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম নেটওয়ার্ক কম্পিউটিং এবং ক্লাস্টারিংয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: Amoeba, Plan 9, Windows Server।

৭. এম্বেডেড অপারেটিং সিস্টেম (Embedded Operating System):

  • এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেম ছোট এবং বিশেষায়িত ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়, যেমন মোবাইল ফোন, রাউটার, এবং গাড়ির কন্ট্রোল সিস্টেম।
  • এটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে এবং কম মেমোরি ব্যবহারে দক্ষ।
  • উদাহরণ: FreeRTOS, Embedded Linux, Windows CE।

৮. নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (Network Operating System):

  • নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ডিভাইস এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
  • এটি ফাইল শেয়ারিং, প্রিন্ট শেয়ারিং, এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান করে।
  • উদাহরণ: Novell NetWare, Windows Server, UNIX।

৯. মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (Mobile Operating System):

  • এই অপারেটিং সিস্টেম স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের মতো মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
  • এটি সাধারণত হালকা এবং কম ব্যাটারি খরচের জন্য ডিজাইন করা হয়, এবং টাচস্ক্রিন ইন্টারফেস এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সমর্থন করে।
  • উদাহরণ: Android, iOS, Windows Mobile।

অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদের তুলনা:

প্রকারবৈশিষ্ট্যউদাহরণ
সিঙ্গেল ইউজারকেবল একজন ব্যবহারকারী সাপোর্ট করেMS-DOS, Windows XP
মাল্টি-ইউজারএকাধিক ব্যবহারকারী সাপোর্ট করেUNIX, Linux
রিয়েল-টাইমনির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করেVxWorks, FreeRTOS
সিঙ্গেল টাস্কিংএকবারে একটি কাজ সম্পন্ন করেMS-DOS
মাল্টি-টাস্কিংএকসঙ্গে একাধিক কাজ সম্পন্ন করেWindows, Linux
ডিস্ট্রিবিউটেডএকাধিক ডিভাইসের সমন্বয় সাধন করেAmoeba, Plan 9
এমবেডেডবিশেষায়িত ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়FreeRTOS, Embedded Linux
নেটওয়ার্কনেটওয়ার্ক পরিচালনা এবং পরিষেবা সরবরাহ করেWindows Server, UNIX
মোবাইলমোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়Android, iOS

সারসংক্ষেপ:

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টি-ইউজার, রিয়েল-টাইম, এমবেডেড, এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এগুলোর কাজের ধরন, প্রযুক্তি, এবং ব্যবহারের প্রয়োজন অনুসারে ভিন্নতা থাকে। প্রতিটি প্রকারের অপারেটিং সিস্টেম নির্দিষ্ট ডিভাইস বা পরিবেশে কার্যকরভাবে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সেরা অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

Content updated By
Promotion